ফানুস (অণুগল্প)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:০০:৪২ দুপুর
জোবেদা যে বাসায় কাজ করে সে বাসার মানুষটার নজর খুব খারাপ। জোবেদা রশিদকে জানিয়েছে। দুজনে সারাদিন পরিশ্রমের পরে ছেলে-মেয়েগুলো ঘুমালে যে একান্ত সময়টুকু পায়- বস্তির একটা পুতি-দুর্গন্ধময় ঘরে তখন যেন স্বর্গ নেমে আসে! নিজেদের হৃদয়ে ধারণ করা ভালবাসার সুরভি দিয়ে ওরা সকল দুর্গন্ধকে হটিয়ে দেয়... একে অপরের কাছে আসার দ্বারা সারাদিনের শারীরিক কষ্ট ও মানসিক দৈন্যতা মুহুর্তে দূর হয়। একান্ত এই সময়ে জোবেদা ওকে অনেক কিছু জানায়। নিজের অন্তরে লালন করা কিছু টুকরো টুকরো স্বপ্নের কথা বলে... আনন্দ-মধুর কিছু স্মৃতিকে ঘিরে এখনকার পরিবর্তিত পরিবেশে বেদনা-বিধুর মুহুর্তকে সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এক নারীর অসহায়ত্ব অনুভব করে রশিদ কষ্ট পায়। বেদনায় নীল হয়... তারপর জোবেদার ভালবাসার বাঁধ ভাঙা জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে দিতে নিজের ভিতরেও কিছু স্বপ্নকে লালন করে।
গরিবি হালত মানুষের ভিতর থেকে অনেক কিছুই কেড়ে নেয়। প্রতিটি মানুষের ভিতরে দয়া-মায়া কিছু না কিছু থাকে। কিন্তু গরীবদের যেন এই মায়া থাকতে নেই। রিক্সা নিয়ে প্রতিদিন মেয়েদেরকে সহ জোবেদাকে ওর কাজের যায়গায় পৌঁছে দেয় রশিদ। খাবারের দোকানগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় মেয়েরা সেগুলোর জন্য বায়না ধরে। আইসক্রিমের দোকানের পাশ দিয়ে আইসক্রীম হাতে নিয়ে বের হওয়া অন্য ছেলেমেয়েদের দেখে ওরাও অসহায় হয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকায়। ছোট মেয়েটি তো বাবাকে ভাঙা ভাঙা গলায় বলে কিনে দিতে। কিন্তু অতি হিসেবের সংসারে সামান্য রকমের বিলাসিতা করারও যে জো নেই। জোবেদা এবং রশিদ মনে মনে অসহনীয় চাপা ব্যথা নিয়ে নিরন্তর কষ্ট পেতে থাকে। আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে চেয়ে থেকে সামান্য কিছু স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। যে যত গরিব, তার স্বপ্নও ততোধিক গরীব। আশাগুলো কেন জানি দীর্ঘায়িত হতে চায় না।
বিষয়: সাহিত্য
১০১৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুভেচ্ছা রইলো।
ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার এবং সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
ভালো থাকবেন।
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন